গত দুই দিনের বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় ঠাকুরগাঁওয়ের শত শত বিঘা জমির আমন ধান মাটিতে নুয়ে পড়েছে। বিভিন্ন এলাকায় আমন ধান চাষিদের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন আগাম শীতকালীন সবজি ও আলুচাষিরা এমনটাই জানান কৃষক। তবে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হলে ফসলের মাঠে পানি বেশি দিন জমে থাকতে পারবে না। তাই ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা কম।

গত সোমবার বিকেল থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় ঘরবাড়ি ও গাছপালার ক্ষয়ক্ষতি না হলেও জেলার শতাধিক হেক্টর জমির আমন ধান মাটিতে নুয়ে গেছে। ১০-১৫ দিনের মধ্যে এসব ধান কেটে ঘরে তুলতেন কৃষকেরা। এখন বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা করছেন তাঁরা। অপরদিকে আগাম সবজি ও আলু চাষিদের মাথাঁয় হাত। বর্তমানে আলুর দাম নেই, আগাম আলু করে লাভ করার আশায় এখন লসের মুখে কৃষক।

 

বুধবার সদর উপজেলার শীবগঞ্জ, জগন্নাথপুর, নারগুনসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আধা-পাকা ধানের গাছ ও সবজিখেত পানিতে ডুবে আছে। মাটিতে নুয়ে পড়া ধানগাছ গোছা বেঁধে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন অনেক কৃষক। অনেকে আবার সবজি ও আলু ক্ষেতের পানি ড্রেন করে বের করতে ব্যাস্ত।

 

সদর উপজেলার শীবগঞ্জ এলাকার কৃষক মকলেস উদ্দিন বলেন, আর মাত্র ১০-১৫ দিন পরই খেতের ধান পাকতে শুরু করবে। কিন্তু হঠাৎ এই বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় ৭০-৮০ শতাংশ জমির আমন ধান মাটিতে হেলে পড়েছে। এই ধান এখন কি হবে, কিভাবে এই লস পুরণ হবে ভেবে পাচ্ছি না।

 

ওই এলাকার আরেক কৃষক দুলাল হোসেন বলেন, ‘তিন বিঘা জমিতে আগাম ব্রি সুমন স্বর্ণা জাতের ধান লাগিয়েছি। মাঠে ধান পেকে গেছে। দু-এক দিন পর ঘরে তুলব। অসময়ের বৃষ্টিতে পাকা ধান নুয়ে পড়েছে। এতে ধান তুলতে পারলেও গুণগত মান নষ্ট হয়ে যাবে।’ এখন লোকসান হবে ৮-১০ হাজার টাকার মতো।

 

নারগুন এলাকার কৃষক তসলিম উদ্দিন বলেন, আগাম সবজি ও আলু চাষ করেছি লাভের আশায়। কিন্তু এই বৃষ্টি সব শেষ করে দিল। আলু ক্ষেত পানিতে ডুবে আছে। আলু যেগুলো লাগানো হয়েছে আর বৃষ্টি হলে সব আলু পচেঁ যাবে। সবজি ক্ষেতেও বিজগুলো পানিতে পচেঁ যাওয়া শুরু করেছে।

 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষন অফিসার সিরাজুল ইসলাম বলেন, যেসব জমির ধানে সবেমাত্র শিষ এসেছে বা বের হয়নি, ওই জমির ধানের কিছুটা ক্ষতি হতে পারে। পাশাপাশি আলুখেতে পানি জমে থাকায় চাষিরা কিছুটা ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন। চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষাবাদ হয়েছে বলে কৃষি অফিস জানায়।

 

দিনাজপুর অঞ্চল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শাহ আলম কৃষকের মাঠ পর্যবেক্ষন করতে এসে জানান, মাঠ পর্যবেক্ষন করে আমরা দেখলাম প্রায় ৬হাজার হেক্টর জমির ধান, সবজি ও আলুর ক্ষতি হয়েছে। কৃষকদের নামের তালিকা করা শুরু হয়েছে। ক্ষতি পুরণ দেওয়ার জন্য আলোচনা করে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।